আলোচনা সভা: নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের আহ্বান
Published On Dec 18, 2021
ইউএনএ: আগামী ৩০ ডিসেম্বর রোববার বাংলাদেশের বহুল আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালনের আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব। সেই সাথে একাত্তুরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির বাংলাদেশ-এর প্রত্যাশায় দেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করাও সময়ের দাবী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ। গত ২১ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজিত ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮’ বিষয়ক ক্লাবের এক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এই দাবী জানান।
সিটির জ্যাকসন হাইটসের নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত নির্বাচন বিষয়ক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি ও সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর বার্তা সম্পাদক শিবলী চৌধুরী কায়েসের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হককথা.কম সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশবাংলা’র নির্বাহী সম্পাদক আলমগীর সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল, ক্লাব সদস্য ও সাপ্তাহিক আজকাল-এর স্বাস্থ বিষয়ক সম্পাদক ডা. সজল আশফাক, ক্লাবের কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও ইয়র্ক বাংলা সম্পাদক রশীদ আহমদ এবং ক্লাব সদস্য এমদাদ হোসেন চৌধুরী। এছাড়াও সভায় ক্লাবের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু ও ক্লাব সদস্য আনোয়ার হোসেন বাবু উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশে বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যে যাই বলুক বা দাবী করুণ না কেন বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকল মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ থাকা দরকার তা এখনো অনুপস্থিত। অপরদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে দেশবাসীসহ প্রবাসী সকল বাংলাদেশীদের মতো নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সদস্যরাও উদ্বিগ্ন। সভায় বক্তারা বলেন, নির্বাচন ঘিরে সরকারের কর্মকান্ডের সমালোচনা এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনেরও দাবী জানান। অন্যথায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর সেনাবাহিনী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে করলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে। বক্তারা বলেন, আমরা কোন দল বা মতের পক্ষে-বিপক্ষে নই, নির্বাচন কোন দল ক্ষমতায় আসলো বা থাকলো তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেকোন মূল্যে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
সভায় আবু তাহের তার বক্তব্যে ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, একাত্তুরের স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় আস্থার জায়গা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে অন্ধের মতো সংবিধান মোতাবেক কাজ করা উচিৎ। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থা সরকার, বিরোধীদল, জনগণ কারো জন্য সুখকর নয়। দেশের নতুন প্রজন্ম আর সুন্দর-স্বাস্থকর বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি জাতীয় ঐক্যজোট-এর নির্বাচনী ইশতেহারে দুই মেয়াদের বেশী প্রধানমন্ত্রী নয় বলে যে অঙ্গীকার করেছে সে ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমত দরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রবাস থেকে যতটুকু দেখছি, যতটুকু জানছি তাতে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যেটুকু লেবেল প্লেইং ফিল্ড দরকার, তা হয়নি। সরকার আর নির্বাচন কমিমশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।
আলমগীর সরকার বলেন, বাংলাদেশের ভালো-মন্দের সাথে আমরা প্রবাসীরাও জড়িত। আইন করে সব কিছু করার দরকার নেই, দেশকে ভালোবেসে সবাই মিলে কাজ করলেই তো দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। এই ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব আওয়ামী লীগেরই। তিনি বলেন, আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ চাই, স্থিতিশীল বাংলাদেশ চাই।
চৌধুরী মোহাম্মদ কাজল আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার। সকল প্রার্থীর প্রচারণাও সমানভাবে হওয়ার পরিবেশ দরকার। ইতিহাস বলে বাংলাদেশে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচন ছাড়া কোন দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হয়নি।
ডা. সজল আশফাক বলেন, জাতীয় নির্বাচন সহ যেকোন নির্বাচনেই মিডিয়ার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রসঙ্গে সেসব নিউজ মিডিয়ায় আসার কথা তা আমরা দেখছি না। অথচ এসব খবর সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে আসছে। বাস্তবতা হচ্ছে আমরা প্রবাস থেকে যা বলতে পারছি, দেশ থাকলে তা বলা যেতো না। বর্তমানে দেশে যা ঘটছে তাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই। দেশে উন্নয়নের নামে দূর্নীতি হয়েছে। মনে হচ্ছে দেশের সরকারী দল এক দিকে আর দেশের সকল দল অন্যদিকে। সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা উদ্বিগ্নি। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে, উন্নয়নও হবে। আমরা স্বজন হারিয়ে উন্নয়ন চাই না। সুস্থ, সাবলীর বাংলাদেশ চাই।
রশীদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছে না, মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই। সরকার নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে সংবিধানের দোহাই দিয়ে আদালত ব্যবহার করছেন, যা কাম্য নয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার আতœীয় বিএনপি সমর্থন করেন বলেই সিলেটে আমাদের বাসায় হামলা হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি বুঝি না। দল-মত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। দেশের জনগণ একবার আওয়ামীগ আবার বিএনপিকে চায়। মূলত: জনগণ আওয়ামী লী-বিএনপি-কে ভোট দেয় না, তারা পরিবর্তন চায়।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্কটময় মূহুর্তে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। দেশে প্রতিহিসার রাজনীতি চলছে। এই নির্বাচন ঘিরে দেশবাসীর মতো প্রবাসীরাও উৎসাহিত আবার উদ্বিগ্নও। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ সহ আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছরেও দেশের কোন পরিবর্তন হয়নি। দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। তিনি বলেন, স্বাধীনতার চেতনা দেখার বিষয় নয়, অনুভবের বিষয়। আর জনদাবী দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা জরুরী। প্রত্যাশিত নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে মেরুদন্ড শক্ত করে দাঁড়াতে হবে, ভোটধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর পুলিশ-সেনাবাহিনীকে জনগণের জন্য নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র চাই, ন্যায় বিচার চাই, সুশাসন চাই।